hMPV ভাইরাস বা Human Metapneumovirus (hMPV) হলো একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস যা মূলত ফ্লু বা ঠান্ডাজনিত লক্ষণ সৃষ্টি করে। এটি Paramyxoviridae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি RNA ভাইরাস। hMPV প্রধানত শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের মানুষের মধ্যে বেশি সংক্রমণ ঘটায়।
লক্ষণসমূহ:
• নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হওয়া
• কাশি
• জ্বর
• শ্বাসকষ্ট
• গলা ব্যথা
• ক্লান্তি
• গুরুতর ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কিওলাইটিস
সংক্রমণের ধরণ:
ভাইরাসটি সংক্রামিত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছড়ায়।সংক্রমিত পৃষ্ঠ স্পর্শ করার পর হাত মুখে দিলে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী:
৫ বছরের কম বয়সী শিশু
৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক
দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি
শ্বাসযন্ত্রজনিত পুরনো রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তি
চিকিৎসা:
hMPV-এর নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। চিকিৎসা প্রধানত উপসর্গ নিরাময়ের মাধ্যমে হয়।
• পর্যাপ্ত বিশ্রাম
• প্রচুর পানি পান
• জ্বর বা ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল
বা আইবুপ্রোফেন
• গুরুতর ক্ষেত্রে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন হতে পারে।
Human Metapneumovirus (hMPV) থেকে বাঁচার জন্য সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এটি ঠান্ডাজনিত সাধারণ ভাইরাস, কিছু পদক্ষেপ আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়:
১. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন:
নিয়মিত হাত ধোয়া:
কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। যদি পানি বা সাবান না থাকে, তাহলে অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
মুখ, নাক এবং চোখে হাত দেয়া এড়িয়ে চলুন:
হাত অপরিষ্কার থাকলে মুখমণ্ডল স্পর্শ না করা নিরাপদ।
২. সংক্রমণ থেকে দূরে থাকুন:
অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকুন।
বদ্ধ বা জনবহুল স্থানে মাস্ক ব্যবহার করুন।
আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি-কাশি দিলে দূরে থাকুন এবং দ্রুত পরিবেশ পরিষ্কার করুন।
৩. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন:
বাড়ি এবং কর্মস্থল জীবাণুমুক্ত রাখুন।
দরজার হাতল, মোবাইল, টেবিল, খেলনা, রিমোট ইত্যাদি যেসব পৃষ্ঠে হাত পড়ে সেগুলো নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করুন।
৪. শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিন:
শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস শেখান।
অসুস্থ হলে স্কুল বা ডে-কেয়ারে না পাঠানো ভালো।
৫. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করুন:
পুষ্টিকর খাবার খান, যেমন: ফল, শাকসবজি, প্রোটিন এবং পর্যাপ্ত পানি পান। নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
৬. সঠিক আচরণ করুন:
হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢাকুন (টিস্যু বা কনুই দিয়ে)।ব্যবহৃত টিস্যু দ্রুত ফেলে দিন এবং তারপর হাত ধুয়ে নিন।
যদি সংক্রমণ হয়:
দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। বাড়িতে থাকুন এবং অন্যদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট গুরুতর হলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিন। এটি প্রতিরোধযোগ্য ভাইরাস, সুতরাং সতর্কতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আপনি এবং আপনার পরিবার নিরাপদ থাকতে পারবেন।