ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও ঝুঁকি
ব্রেস্ট ক্যান্সার: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
ব্রেস্ট ক্যান্সার (স্তন ক্যান্সার) নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তবে এটি পুরুষদেরও হতে পারে (খুবই বিরল ক্ষেত্রে)। এটি তখন ঘটে যখন স্তনের কোষগুলি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে টিউমার তৈরি করে এবং ক্যান্সারে রূপ নেয়।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণ ও ঝুঁকি
ব্রেস্ট ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই, তবে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কারণ একে বৃদ্ধি করতে পারে।
১. বয়স এবং জিনগত কারণ
- ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের ঝুঁকি বেশি।
- পারিবারিক ইতিহাস থাকলে (মা, বোন, খালা বা দাদী যদি ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন)।
- BRCA1 ও BRCA2 নামে কিছু জিনের মিউটেশন থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- দীর্ঘ সময় ধরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের উচ্চমাত্রায় থাকা (যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল দীর্ঘদিন সেবন করা)।
- দেরিতে সন্তান নেওয়া (৩০ বছরের পর প্রথম সন্তান নেওয়া) বা কখনো মা না হওয়া।
- বুকের দুধ না খাওয়ানো (স্তন্যদান না করলে ঝুঁকি কিছুটা বেড়ে যেতে পারে)।
- স্থূলতা, ধূমপান, অ্যালকোহল গ্রহণ এবং শারীরিক পরিশ্রম কম করা।
- দীর্ঘদিন হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT) নেওয়া।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ
প্রাথমিক লক্ষণ:
✔ স্তনে বা বাহুর নিচে গুটি বা চাকা অনুভব করা।
✔ স্তনের আকৃতি বা আকার পরিবর্তন হওয়া।
✔ স্তনের ত্বকে কুঁচকে যাওয়া বা লালচে হয়ে যাওয়া।
✔ নিপল ভিতরের দিকে ঢুকে যাওয়া বা নিপল থেকে অস্বাভাবিক তরল (রক্ত বা পুঁজ) বের হওয়া।
উন্নত পর্যায়ের লক্ষণ:
✔ স্তনের ত্বক শক্ত ও কমলাতোসী লেবুর খোসার মতো হয়ে যাওয়া।
✔ শরীরে দুর্বলতা, ওজন কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট (যদি ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে)।
কিভাবে ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়?
১. ব্রেস্ট সেলফ-এক্সামিনেশন (নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করা)
- প্রতি মাসে একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অথবা শোয়া অবস্থায় স্তন পরীক্ষা করা উচিত।
- কোনো গুটি, ব্যথা বা পরিবর্তন অনুভব করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
২. ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশন
- ডাক্তার বা নার্স বিশেষ পদ্ধতিতে স্তন পরীক্ষা করেন।
৩. ম্যামোগ্রাফি (X-ray পরীক্ষা)
- ৪০ বছর বয়সের পর প্রতি ১-২ বছর অন্তর এই পরীক্ষা করানো উচিত।
৪. আলট্রাসোনোগ্রাফি ও এমআরআই (MRI)
- যাদের ম্যামোগ্রাফিতে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়, তাদের জন্য এই পরীক্ষা করা হয়।
৫. বায়োপসি (Biopsy)
- স্তন থেকে কিছু টিস্যু সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়।
ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়
✅ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রাখা।
✅ অতিরিক্ত ওজন এড়ানো, নিয়মিত ব্যায়াম করা।
✅ ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা।
✅ বুকের দুধ খাওয়ানো (প্রাকৃতিকভাবে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়)।
✅ জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা হরমোন থেরাপি ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা
চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরণ, স্টেজ এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর।
১. সার্জারি (অপারেশন)
- লাম্পেকটমি (Lumpectomy): ক্যান্সার আক্রান্ত অংশটুকু কেটে ফেলা হয়।
- ম্যাসটেকটমি (Mastectomy): পুরো স্তন ফেলে দেওয়া হয়।
২. কেমোথেরাপি (Chemotherapy)
- ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করার জন্য বিশেষ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
৩. রেডিয়েশন থেরাপি (Radiation Therapy)
- স্তনে ক্যান্সারের কোষ নষ্ট করতে উচ্চ শক্তির রশ্মি ব্যবহার করা হয়।
৪. হরমোন থেরাপি (Hormone Therapy)
- কিছু ক্যান্সার ইস্ট্রোজেন দ্বারা বেড়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
৫. টার্গেটেড থেরাপি (Targeted Therapy)
- HER2 পজিটিভ ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা
- প্রয়োগ করা হয়।
উপসংহার
ব্রেস্ট ক্যান্সার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব। তাই সচেতনতা ও নিয়মিত পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বা আপনার পরিচিত কারও যদি কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।