আপনার শিশু কি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে রয়েছে?


শিশুরা যদি সঠিকভাবে খাবার না খায়, পর্যাপ্ত ঘুম না পায় এবং মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। এটি দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

১. অপুষ্টি ও রোগপ্রবণতা

নিয়মিত খাবার না খেলে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান (ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন) পাওয়া যায় না। অপুষ্টির কারণে রক্তশূন্যতা, হাড় দুর্বল হওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, এবং সহজেই সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে, বিশেষ করে উচ্চতা ও ওজন স্বাভাবিক মাত্রায় না পৌঁছানো।

২. ঘুমের ঘাটতি ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা

পর্যাপ্ত ঘুম না পেলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়, ফলে শেখার ক্ষমতা কমে যায়।মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, অকারণে রাগ বা আবেগের ওঠানামা দেখা দিতে পারে।শিশুদের স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ কমে যেতে পারে, ফলে তারা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়তে পারে।দীর্ঘমেয়াদে ঘুমের অভাব শিশুদের উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও আচরণগত সমস্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

৩. মোবাইল আসক্তি ও তার ক্ষতিকর প্রভাব

মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার চোখের সমস্যার কারণ হতে পারে, যেমন দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া বা অতিরিক্ত পরিশ্রান্তি অনুভব করা। ব্লু লাইটের কারণে মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণ বাধাগ্রস্ত হয়, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ব্যবহারের ফলে শিশুদের শারীরিক সক্রিয়তা কমে যায়, যা স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সামাজিক দক্ষতা কমে যেতে পারে, কারণ শিশুরা বাস্তব জীবনের মানুষের সঙ্গে কম যোগাযোগ করে। পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে যেতে পারে, ফলে একাডেমিক পারফরম্যান্স খারাপ হয়।

৪.কীভাবে এই সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করা যায়?

শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা তৈরি করা এবং তাদের সঠিকভাবে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। নিয়মিত ঘুমানোর সময় নির্ধারণ করা এবং ঘুমের পরিবেশ আরামদায়ক রাখা।মোবাইল ব্যবহারের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া, বিশেষ করে ঘুমের আগে ১-২ ঘণ্টা মোবাইল ব্যবহার বন্ধ রাখা। শারীরিক কার্যকলাপে (খেলাধুলা, ব্যায়াম) উৎসাহিত করা, যাতে শিশুদের শরীর ও মন সুস্থ থাকে। পরিবারের সবাই একসঙ্গে সময় কাটানো এবং শিশুকে বই পড়া, গল্প বলা বা সৃজনশীল কাজে যুক্ত করুন। 

উপসংহার :

তাই পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজকে একসঙ্গে কাজ করে শিশুদের সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে হবে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা, ঘুমের নিয়ম মেনে চলা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শিশুদের সুস্থ, সচেতন ও কর্মক্ষম ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব। অভিভাবকদের উচিত শিশুদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেওয়া, তাদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা।

শিশুরাই ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি—তাই তাদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার।